Spinning arrow আমাদের কুষ্টিয়া আমাদের কুষ্টিয়া আমাদের কুষ্টিয়া আমাদের কুষ্টিয়া
রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য শিলাইদহের কুঠিবাড়ি এবং বাউল সম্রাট লালনের সাধনভূমি ছেউরিয়াকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের যুগযুগ ধরে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে চলেছে। এর বাইরে প্রখ্যাত সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেনের বাস'ভিটা, কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার, বাঘা যতীন, ডঃ রাধা বিনোদ পালের স্মৃতিচিহ্ন, রবীন্দ্রনাথের টেগরলজ, মোহিনী মিল, রেণউইক যজ্ঞেশ্বর বাঁধ, ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্পের প্রধান পাম্প হাউজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুকে ঘিরে সব সময় মুখরিত থাকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারণা। ইচ্ছে করলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন।

 হার্ডিঞ্জ ব্রিজ :
তৎকালীন ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারে ব্রীজটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ শত ৬৪ টাকা। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮ শত ফুট। ব্রীজটিতে ১৫টি স্প্যান আছে। ব্রীজটি ঈশ্বরদী ভেড়ামারা সীমানায় পদ্মানদীর উপর অবস্থিত। ব্রীজটি দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচল করে।
                                                                      ছবি : হার্ডিঞ্জ ব্রিজ


লালন শাহ সেতু :
কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের অদূরে পদ্মা নদীর উপর নির্মান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১.৮ কিমি এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। সেতুটি নির্মান শুরু হয় ২০০৩ সালে। চীনের প্রতিষ্ঠান মেজর ব্রীজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো এর নির্মান কাজ করেন। সেতুটির মোট লেন সংখ্যা চার। মোট স্প্যনের সংখ্যা ১৭টি। সেতুটি সম্পূর্ন যান চলাচলের জন্য উম্নুক্ত করে দেয়া হয় ১৮ মে ২০০৪ সালে। সেতুটি তৈরীর ফলে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর , ঝিনাইদহ ও গোটা দক্ষিণ জেলার লোকেদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে।
                                                               ছবি :লালন শাহ সেতু

পদ্মা নদী : পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গানদীর প্রধান শাখা এবং বাংলাদেশের ২য় দীর্ঘতম নদী। এই নদী কুষ্টিয়া শহরের মাত্র ১.৫ কি.মি দূর দিয়ে বয়ে গেছে। চাইলেই আপনারা এই পদ্মা নদী ঘুরে বেড়াতে পারেন ।


                                                                                ছবি : পদ্মা নদী

গড়াই নদী :  
কুষ্টিয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছেগড়াই নদী । এই গড়াই নদীর তীরে মন খুলে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বিকালে সূর্য ডোবার মুহূর্ত গুল ক্যামেরা বন্দি করতে পারেন ।


                                                                                ছবি : গড়াই নদী

রেণউইক যজ্ঞেশ্বর বাঁধ :
রেণউইক যজ্ঞেশ্বর বাঁধটি কুষ্টিয়া শহরের ভিতরে গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত। রেণউইক যজ্ঞেশ্বরের মিলের একটি বাঁধ । এখনে নদীর মনোরম পরিবেশ পাবেন । প্রকৃতির মাঝে যেন হারিয়ে যাবেন । এখনে আরও দেখতে পাবেন বিকালে সূর্য ডোবার মুহূর্ত ।
                                                         ছবি : রেণউইক যজ্ঞেশ্বর বাঁধ


শিলাইদহ কুঠিবাড়ি :
কুষ্টিয়া শহর থেকে ১ ঘন্টারও কম সময়ে যাওয়া যাবে কুঠিবাড়ি। চারদিকে বাগান বেষ্টিত এ মনোরম পরিবেশে আপনার সারাদিন থাকতে ইচ্ছা করবে। কুঠিবাড়ির ভেতরে কবিগুরুর ব্যবহার্য বিভিন্ন আসবাবপত্র, বাইরে বকুলতলার পুকুকঘাট এবং পাশ্ববর্তী পদ্মার পাড়ও আপনাকে মুগ্ধ করবে। পুরো বাড়িটা আমবাগানে ঘেরা। বাড়ির চারপাশে ঢেউ খেলানো দেয়াল, যেন পদ্মারই ঢেউ। পাশে বকুল তলার শানবাঁধানো পুকুর ঘাট, জায়গাটা এখনো কোলাহলপূর্ণ। বাড়ির সামনে শান-বাঁধানো উন্মুক্ত বৈঠকখানা যেখানে প্রজারা এসে বসতো সেই সময়। বাড়ির পেছনে টেনিস কোর্ট। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে বড় বড় কয়েকটি কক্ষ, সোফাসজ্জিত ড্রইংরুম। পড়াশোনার টেবিল, চেয়ার, শোবার ঘর বিছানো খাট, বড় আলমারী, বুকসেলফ, আরাম কেদারা, স্নানের চৌবাচ্চা, বিশালাকার কমোড বিশিষ্ট বাথরুম। জানালা খুললে উপনের দুই বিঘা জমি, সেই তাল গাছের স'ান। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিক পর্যন- প্রশস- কাঠের ঝুলবারান্দা, সামনে চওড়া বারান্দায় আছে একটি বড় সিপ্রডবোর্ড, তিনতলার ছাদে উঠলে চোখে পড়ে পদ্মার চর, কখনোবা ঢেউয়ের খেলা। শুধু যা নেই তা হল কবির পদচারণা, কোলাহলমূখর সেইসব অতীত। পদ্মা-গড়াই-হিশনার শীতল স্রোতে প্লাবিত এই অঞ্চল। এখানকার জনপদের ইতিহাস এক নদীর মতোই উদার, মহান ও বিশালতাই পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে এসেছিলেন প্রথমে জমিদারী দেখাশোনা করার কাজে। জমিদার রবীন্দ্রনাথ মিশে গিয়েছিলেন শিলাইদহের প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে। তার প্রতিটি লেখায় মুর্ত হয়ে উঠেছে এখানকার মানুষের কথা। হয়তো শিলাইদহের অকৃত্রিমতাই মুগ্ধ হয়ে কবি গেয়ে উঠেছিলেন আকাশ ভরা সূর্যতারা/ বিশ্ব ভরা প্রাণ/ তাহারি মাঝখানে / বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান ॥ শুধু জমিদারিত্বই নয় এই শিলাইদহ ছিল রবী ঠাকুরের সাহিত্য সৃষ্টির এক অপূর্ব প্রেরণা। এখানে তিনি রচনা করেন মানসী, সোনারতরী, চিত্রা, বলাকা, ক্ষণিকা, নৈবদ্য প্রভৃতি। তার অনবদ্য সৃষ্টি গল্পগুচ্ছের অধিকাংশ গল্প রচিত হয়েছিল এখানেই এমনকি গীতাঞ্জলীর অধিকাংশ গল্প। এমনকি গীতাঞ্জলীর অধিকাংশ গান সৃষ্টি হয় এই শিলাইদহে। ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন- রীবন্দ্রনাথ বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। জমিদারির কাজে কিংবা ব্যবসার কাজে কখনও স্বল্প কখনও দীর্ঘ সময় থেকেছেন এখানেই। এসেছেন একাকী কিংবা স্বপরিবারে। ঘুরে বেড়িয়েছেন বোর্ডে, পালকিতে। প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহ কতখানি সমৃদ্ধ করেছিল তার লেখাতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। শিল্প-সাহিত্য, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এখানে সে সময় আবির্ভাব ঘটেছিল বড় বড় প্রভাবশালী মহৎ সব ব্যক্তিত্বের। তাই তিনি আবেগ ভরা কন্ঠে বলেছিলেন ......... ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী আমারই সোনার ধানে গিয়াছে যে ভরি। রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশাতে ১৩৪৬ সালের ১ চৈত্র শিলাইদহ পল্লী সাহিত্য সম্মেলনে সম্পাদককে লিখেছিলেন আমার যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্যরস সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহের পল্লীতে। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ সেই বাড়িটি এখন এক স্মৃতিচিহ্ন জাদুঘর। মাত্র দশ টাকার বিনিময়ে মানুষ পেতে পারে অতীতের সেই সোনালী স্পর্শ। এখানে আছে কবির আঁকা ছবি ও লেখা। এছাড়াও আছে কবি ব্যবহৃত পালকি, ছয় বেহারার পালকি, চার বেহারার পালকি। আছে বিট্রিশ আমলের ঘাস কাটার যন্ত্র, কিছু দূর্লভ পেপার কাটিং ও কবির নিজ হাতে লেখা চিঠি। মূল বাড়ির বাইরে একটি বিশাল আকার মঞ্চ আছে। প্রতি বছর রবীন্দ্রজয়ন্ত্রী (২৫ বৈশাখ) এখানে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দেশ-বিদেশ থেকে রবীন্দ্র ভক্তরা যোগ দেয় এ অনুষ্ঠানে। ২৫ বৈশাখ উপলক্ষে এখানে বসে তিন দিনের মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে লোক সমাগম হয় প্রচুর। সবর হয়ে ওঠে কুঠি বাড়ি। ইচ্ছে করলে কুঠিবাড়ি সংলগ্ন খোরশেদপুরে গ্রামের কামেল কিংবদনি- পুরুষ হজরত খোরশেদ উল মৌলুকের মাজারও ঘুরে আসতে পারেন।
                                                                       ছবিঃ শিলাইদহ কুঠিবাড়ি


লালন শাহের মাজার:
শহরসংলগ্ন কালিগঙ্গা নদীর তীরে লালনের সাধনভূমি ছেউড়িয়া গ্রাম। এখানেই লালন শাহ এবং অন্যান্য সাধুর মাজার ও লালন মিউজিয়াম। এই মাজারে প্রবেশ করতেই হয়তো আপনার মনে বেজে উঠবে সেই মরমী সুর ‘বাড়ির কাছে আরশী নগর সেখা এক পড়শি বসত করে আমি একদিনও না দেখিলাম তারে .............।’  কোন এক অচিন গায়ের অচেনা মানুষ ফকির লালন জীবনভর সন্ধান করেছেন অচিন পাখিকে, সহজ কথায় বেঁধেছেন জীবনের গভীরতম গান-
‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
 ফকির লালন কয়
 জাতের কি রুপ দেখলাম না এ নজরে’
সব জাতের সব শ্রেণীর মানুষের মিলন হয় কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে। প্রতিদিনই এখানে বসে ভবের হাট। গুরু-শিষ্যর ভাবের আদান প্রদান যেমন হয়, তেমনি চলে জীবনের তিরোধান, ভাব সাধন, আর দেহতত্ব নিয়ে অপূর্ব সূর মূর্চ্ছনা। সাধু-ভক্তদের পাশাপাশি বাউল সম্রাটের মাজারটি টানেও আসেন ঝাঁক ঝাঁক পর্যটকের দল। আসেন দেশী-বিদেশী গবেষকগণও । লালনের খ্যাতি এখন শুধু এই কুষ্টিয়ায় নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। লালনের চিন্তা,  আদর্শ, জীবনকর্ম এবং সংগীত এখন পৃথিবী জুড়ে গবেষণার বিষয়বস'তে পরিণত হয়েছে।
‘অনায়াসেই দেখতে পাবি
কোনখানে সাঁই বারাম খানা’
 সাঁইজির এ বারামখানার সন্ধ্যানে মানুষ ছুটে চলেছে সাঁইজির ধামে। যে কোন সময়ের চেয়ে আখড়াবাড়ি এখন অনেক বেশি মুখরিত। আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দুর-দুরান- থেকে ভক্ত অনুসারীরা এখন এখানে আরো বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। নিরাপদ আশ্রয়, সংগীত, ভক্তি প্রদানে কোন সমস্যা হয় কিনা দেখভাল করার জন্য লালন একাডেমির সদস্যরা সবসময়ই নিয়োজিত। তাছাড়াও এখানে এখন নেয়া হচ্ছে নানান কর্মসূচী। নবীন শিল্পীদের সংগীত প্রশিক্ষণ, লালন গবেষনা, অডিটরিয়াম ও বিশালাকার ফাঁকা মঞ্চে নানা অনুষ্ঠানের প্রায় সবসময় মুখর থাকে এ তীর্থস'ান। লালন অনুসারী বাউলরা এ মাজারকে তাঁদের ধর্মীয়  তীর্থস্থান হিসেবেই মানেন । লালন ভক্তরা এখানে পরম শ্রদ্ধায় প্রার্থণা করেন। এ মাজারে একবার মাথা নোয়াতে পারলেই বাউল ধর্মাবলম্বীরা পুরো জীবনই ধণ্য মনে করেন। মানব ধর্মের প্রচারক লালন শাহ’র মাজার ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল অডিটরিয়াম ও একাডেমি কমপ্লেক্স। পাশের কালীনদী ভরাট করে বানানো হয়েছে বিশালাকার খোলার মাঠ।সাথে রয়েছে সুদর্শন মঞ্চ। তবে বড় বড় দালান কোটা উঠলেও লালনের মাজারে ভক্তদের প্রার্থণার রেওয়াজ পাল্টায়নি আজো। এখনও ভক্তরা আসন পেতে বসেন। একতারা হাতে গাইতে থাকেন সারাণ। আর সন্ধ্যা গড়ালেই শুরু হয় ভাব সংগীতের মূর্চ্ছনা। যে কোন পর্যটক বা অতিথি আসলেই গান দিয়ে বরন করে নেন একাডেমির শিল্পীরা। অডিটরিয়ামের ফাঁকা নীচতলায় এজন্য তারা একতারাসহ অন্য যন্ত্রপাতি নিয়ে দল ধরে অপেক্ষায় থাকে। মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিদেশী কোন বিশিষ্ট ব্যাক্তি কুষ্টিয়ায় কোনো জরুরী কাজেও যদি আসেন, যদি তার কর্মসূচী খুব টাইট থাকে তবুও লালন আখড়ায় একবার বেড়াতে যাননি এমন ঘটনা বিরল। এখানে আসলেই অহিংস লালন ভক্তদের সীমাহীন বিশালতায় ও জাতহীন ভাবগাম্ভীর্যে মন ভরে ওঠে। মাজারে একবার ঢুকলে আর বের হতে মন চায় না। লালনের জীবদ্দশা থেকে এখানে চলে আসছে চৈত্রের দৌল পূর্ণিমা  উৎসব। এখন লালনের মৃত্যু বার্ষিকীতে (১৬ অক্টোবর) আরেকটি স্বরণোৎসব বসে। বছরের এ দু’টি উৎসবের দিনগুলিতে প্রতিদিনই লাখো মানুষের ঢল নামে । একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাাঁশির সুরে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। দুর-দুরান- থেকে আসা  বাউলরা দরদভরা কণ্ঠে গেয়ে চলেন লালনের রেখে যাওয়া সব আধ্যাত্মিক গান। তাদের সঙ্গে সুর মেলাতে ভুল করেনা ভক্তরাও। উৎসবকে ঘিরে লালন ভক্ত অনুসারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় চরম উন্মাদনার। লালন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান বলেন, লালনের গানে মানবতা বোধ, অহিসং ভাব ও অসাম্প্রাদায়িক চেতনার কারনে দিন দিন লালনের গানের ভক্ত ও অনুসারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তিনি মনে করেন, আমরা লালনকে নিয়ে অনেক মাতামাতি করি ঠিকই কিন' তার উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারি নাই। আমাদের দাবী লালনের গান কবিতা আকারে আমাদের পাঠ্যপুস-কে অন-র্ভূক্ত করা হোক। আগত অতিথি ও সাধু বাউলেদের জন্য লালন মাজারে একটি রেষ্ট হাউজ নির্মান করাও জরুরী।
কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন দক্ষিন-পূর্বে, কুমারখালী উপজেলার পশ্চিম সীমানে- ছেউড়িয়া গ্রামে মরা কালী নদীর তীরে লালন শাহ’র মাজার। কুমারখালী উপজেলার মধ্যে অবসি'ত হলেও মাজারটি কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। এখানকার সুদৃশ্যমান বিশাল প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে পূর্বদিকে কিছু দূর এগুলেই লালন শাহ এর সমাধি। বিশাল গম্বুজের মধ্যে লালন ও তাঁর স্ত্রী চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সমাধি ঘিরে রয়েছে সারি সারি শিষ্যদের কবর। এটাকেই মূল মাজার বলা হয়। লালন ভক্ত-অনুসারীরা পরম শ্রদ্ধায় প্রার্থণা করেন। এই মাজারটিই বাউল ধর্মাবলম্বীদের তীর্থভূমি । দেশ-বিদেশের লালন ভক্তরা কুষ্টিয়ায় ছুটে আসেন এ মাজারের টানেই। যদিও এই মাজার চত্বর আর আগের মতো নেই। এখানে শহুরে ভাব এসেছে, তবুও ভালো লাগবে আপনার। এখানে বসে বাউলের গান শুনে প্রাণ জুড়িয়ে নিতে পারেন।

                                                               ছবি: লালন শাহের মাজার

মীর মোশাররফের বাস'ভিটা :

উনিশ শতকের অন্যতম মুসলিম সাহিত্যিক, ‘বিষাদ সিন্ধুর’ রচয়িতা মীর মোশাররফ হোসেনের বাস'ভিটা লাহিনীপাড়ার দুরুত্ব মাত্র ২০ মিনিটের। ১৮৪৭ সালে জন্ম নেওয়া মহান এই সাহিত্যিকের শৈশবের অনেক স্মৃতিই খুঁজে পেতে পারেন এখানে। মীর মশাররফ হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে এই লাহিনীপাড়া গ্রামে। তার আত্মচরিত ‘আমার জীবনী গ্রন'’ পাঠে জানা যায়, ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। কুমারখালীর কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্য গুরু। হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ এবং ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামক পত্রিকা দুটিতে মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চা শুরু হয় বলে জানা যায়। তার বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন এই এলাকার এক সম্ভ্রান- ব্যক্তিত্ব। মীর মশাররফ হোসেন প্রথমে জগমোহন নন্দীর পাঠশালায় পড়াশুনা শুরু করেন এরপর তিনি কুমারখালী এম.এন স্কুল, কুষ্টিয়া হাইস্কুল এবং রাজবাড়ী জেলায় পদমদী স্কুলে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। পরে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। আনুমানিক ১৮৬০ সালে মশাররফ হোসেনের মা দৈলতুন্নেসা ইনে-কাল করেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি কলকাতায় তার পিতৃবন্ধু নাদির হোসেনের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেন। এখানে অবস্থান কালে নাদির হোসেনের বড় মেয়ে লতিফুন নেসার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং পরে বিবাহ করেন। কিন' বিয়ের সময় বড় মেয়ের পরিবর্তে মেজো মেয়ে আজিজুন নেসার সাথে মশাররফ হোসেনের বিয়ে হয় নাদির হোসেনের দুরভি সন্ধিতে। এ ঘটনায় লতিফুন নেছা আত্মহত্যা করেন। এ বিয়ে সুখের না হওয়াই তিনি ৮ বছর পর কুমারখালী উপজেলায় সাঁওতা গ্রামের এক বিধবার কন্যা কুলছুমকে বিয়ে করেন। ফলে স্ত্রী আজিজুন নেছার সাথে তার মনোমালিন্য আরও তীব্র হয়। এরপর তিনি লাহিনীপাড়া ছেড়ে টাঙ্গাইলে চলে যান। সেখানে তিনি শানি-তে বসবাস করতে থাকেন। আজিজুন নেছা কয়েক বছর নিঃসঙ্গ থাকার পর লাহিনী পাড়াতেই মারা যান। মশাররফের প্রথম পক্ষের কোন সন-ান ছিল না। তার ৫ পুত্র ও ৬ কন্যার সবাই ছিলেন কুলছুম বিবির গর্ভজাত। ১৯১১ সালে পদমদী গ্রামে যাবার পথে পাংশায় কুলছুম বিবি মারা যান। এর কিছুদিন পরই একই বছরের ১৯শে ডিসেম্বর বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার পদমদী গ্রামে কুলছুম বিবির সমাধির পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর মুসলিম সাহিত্যিকদের অন্যতম কীর্তিমান পুরুষ মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই তার নিপুন হাতের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, জীবন চরিত্র, আত্মজীবনী প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক প্রায় ৭৬টি গ্রন' রচনা করেছেন। এছাড়া জমিদার দর্পণ, বিবি কুলছুম, রত্নাবতী ও বসন-কুমারী নাটক তার অনন্য সৃষ্টি।

                                                                    ছবি: মীর মোশাররফ  
                                                                ছবি: মীর মোশাররফের বাস'ভিটা


কাঙ্গাল কুঠির:
শহর থেকে ৪০ মিনিটের দূরত্ব কুমারখালী উপজেলা। এই উপজেলা শহরের মধ্যখানে অবসি'ত। কুষ্টিয়ার প্রথম সংবাদপত্র ‘গ্রামবার্তা’ প্রকাশিকা’র সম্পাদক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের বাড়ি ‘কাঙ্গাল কুঠির’। ১৮৬৩ সালে কুমারখালীর বাংলা পাঠশালার প্রধান শিক্ষক কাঙ্গাল হরিনাথ এম এন প্রেস থেকে এই পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন। গাছ-গাছালিতে ভরপুর এই কাঙ্গাল কুঠিরে আপনি দেখতে পাবেন কাঙ্গালের শেষ স্মৃতিচিহ্ন, যা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে নিঃশেষ হতে চলেছে। এই গ্রামবার্তা প্রকাশিকাতে এক সময় নীলকরদের বিরুদ্ধে এবং অত্যাচারী জমিদার ও লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে কাঙ্গাল হরিনাথ কলম ধরেছিলেন। হরিনাথ মজুমদারের জন্ম ১৮৩৩ সালে, মৃত্যু ১৮৯৬ সালে। অল্পবয়সেই তিনি পিতা-মাতাকে হারিয়েছিলেন। স্থানীয় ইংরেজি স্কুলে পড়ালেখা শুরু। তবে অনাথ হয়ে পড়ায় আর্থিক দুর্গতিতে বেশিদূর এগোতে পারেননি। বিদ্যানুরাগ ছিল প্রবল। সমাজ-সচেতনতাও প্রখর। নিজ গ্রামে তিনি বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় একটি ভার্নাকুলার স্কুল খুলেছিলেন ১৮৫৫ সালে। সেখানেই অবৈতনিক শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। পরের বছর তিনি কুমারখালীতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৮৫৮ সালে এই বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এ দেশে নারীদের শিক্ষার প্রসারেও হরিনাথের ভূমিকা অন্যতম পথিকৃতের।
স্থানীয় জমিদার ও ইংরেজদের প্রজাপীড়ন ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছিল হরিনাথকে। ঈশ্বরগুপ্তের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় এসব নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। সেই তাঁর সাংবাদিকতার শুরু। পরে ১৮৬৩ সালে নিজেই প্রকাশ করেন গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা নামের মাসিক পত্রিকা। পরে এটি পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। গ্রামবার্ত্তা প্রথমে প্রকাশিত হতো কলকাতার গীরিশ বিদ্যারত্ন প্রেস থেকে। বাংলা পিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১৮৬৪ সালে কুমারখালীতে স্থাপিত হয় মথুরনাথ যন্ত্র। বিখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রের পিতা হরিনাথের বন্ধু মথুরনাথ মৈত্র এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি মুদ্রণযন্ত্রটি হরিনাথকে দান করেন। ১৮৭৩ সাল থেকে এই যন্ত্রেই গ্রামবার্তা প্রকাশিত হতে থাকে। ২৫ বছর ধরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছিল। মেশিনের মাঝখানে এ যন্ত্রটির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদনের তারিখে লেখা রয়েছে। লন্ডনের ১০ ফিন্সবারি স্ট্রিটের ক্লাইমার ডিক্সন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে কলম্বিয়ান প্রেস মডেলের ১৭০৬ নম্বর এ মুদ্রণযন্ত্রটি তৈরি করা হয় ১৮৬৭ সালে। প্রয়াত এডওয়ার্ড বিভান এ যন্ত্রটি পেটেন্ট করেন। অমৃতবাজার পত্রিকার বাংলা ১২৮০ সালের ১৭ শ্রাবণ সংখ্যায় কুমারখালীতে কাগজ ছাপা কল বসার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সে খবর লোকমুখে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অসংখ্য লোক তাই দেখতে আসে কেমন করে কাগজের গায়ে অত ছোট লেখা হয়। ৩০-৩৫ মণ ওজনের ডাবল ক্রাউন সাইজের বিশাল মেশিন। দেখতে একটি দানবের মতো। এ মেশিনে কাগজ ছাপাতে তিনজন লোক লাগত। মেশিন চলাকালে দেখা যেত মেশিনের মাথার ওপর ডানা প্রসারিত ঈগল পাখিটা উড়ে গিয়ে আবার যথাস'ানে ফিরে আসছে। দেশ-বিদেশ থেকে প্রায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা এ প্রেস দেখতে আসেন। কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের কোনোদিন কোনো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেখা হয়নি। পারিবারিক দৈন্যের কারণে বালক বয়সে কুমারখালী বাজারের এক কাপড়ের দোকানে কাঙাল হরিনাথ কাজ নিতে বাধ্য হন দৈনিক দুই পয়সা বেতনে। এরপর ৫১টি কুঠির হেড অফিস কুমারখালীর নীলকুঠিতে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন। কিন' মানবদরদি ও সত্যনিষ্ঠ হরিনাথের পক্ষে সেখানেও বেশিদিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। নীলকুঠিরে স্বল্পকালীন কর্মজীবনে হরিনাথ রায়ত-প্রজার ওপর কুঠিয়ালদের অত্যাচার ও শোষণের স্বরূপ নিজ চোখে দেখেন। কাঙালের জীবনীকার অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরীর মতে, এই শোষণের প্রতিকারের চিন্তা থেকেই পরে হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সম্পাদনা করেন। গণসঙ্গীত শিল্পী কমরেড হেমাঙ্গ বিশ্বাস তার এক লেখায় উল্লেখ করেন ‘রবীন্দ্রনাথের আগে ঠাকুর পরিবারের যেসব সদস্য জমিদার হিসেবে শিলাইদহে এসেছিলেন, তারা প্রজাবৎসল ছিলেন না। তাদের অত্যাচারের কথা হরিনাথ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকায় সাহসের সঙ্গে লিখতেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রিয় বন্ধু কাঙালকে শায়েস্থা- করতে পাঞ্জাবি লাঠিয়ালদের কলকাতা জাঁকিয়ে দিয়েছিলেন।
গ্রামবার্তা পত্রিকায় হরিনাথ সাহিত্য, দর্শন বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি অত্যন- সাহসিকতার সঙ্গে জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনি প্রকাশ করেন। একটা পর্যায়ে জমিদারেরা তাঁর ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন। তখন লালন সাঁই অনুসারীদের নিয়ে হরিনাথের বাড়িতে এসে পাহারা দিয়ে তাঁকে রক্ষা করেন।
ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গে হরিনাথের অত্যন- ঘনিষ্ঠতা ছিল। এ ছাড়া বিষাদ সিন্ধু ও জমিদার দর্পণ-এর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, প্রখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক জলধর সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্র, দীনেন্দ্র কুমার রায়রা ছিলেন তাঁর শিষ্যতুল্য এবং গ্রামবার্তার লেখক। হরিনাথ নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক। ‘কাঙাল ফকির চাঁদ বাউল’ নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন। বহু গান লিখেছেন। প্রকাশিত গ্রন' ১৮টি। এর মধ্যে ‘বিজয় বসন-’ নামের উপন্যাসটি অত্যন- জনপ্রিয় হয়েছিল। এর ২০টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর জীবদ্দশাতেই।
পূর্বপুরুষের আর্থিক দৈন্য কাটিয়ে উঠতে পারেননি অশোক মজুমদার। তিনি জানালেন, ১৯৭১ সালে প্রেসঘরটির ওপরে পাকিস্থানি হানাদারেরা বোমা ফেলেছিল। যন্ত্রটি রক্ষা পেলেও ঘরের ছাদ দেয়াল ভেঙে যায়। মেরামত করার সামর্থ্য নেই। এখানেই মাথা গুঁজে আছেন স্ত্রী-পুত্র নিয়ে। ‘ডবল ক্রাউন’ সাইজের কাগজে এই মুদ্রণযন্ত্রটিতে সারা দিনে প্রায় এক হাজারটি ছাপ দেওয়া যায়। ‘যে যন্ত্রে কাঙালের হাতের স্পর্শ, লালনের হাতের স্পর্শ, মীর মশাররফ, জলধর সেনের হাতের স্পর্শ, সেখানে আমি হাত রাখতি পারিছি, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কি আছে’, বলছিলেন অশোক। সে কারণেই যন্ত্রটি বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন।
‘কাঙাল’ বলেই সবার কাছে পরিচিত হরিনাথ মজুমদার। অশোক বাবু জানালেন, কাঙাল হরিনাথের একটি গান সত্যজিৎ রায় ব্যবহার করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত পথের পাঁচালী ছবিতে। কিন' গানটি কার সে উল্লেখ ছিল না ছবির পরিচিতি অংশে। পরে এ সম্পর্কে জেনে চিঠি লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়। খুব পরিচিত গান। পথের পাঁচালীর আবহ সংগীতে ঘুরেফিরে ব্যবহূত হয়েছে, আর ইন্দির ঠাকরুনের ভূমিকায় চূনীবালা গেয়েছিলেন গানটি ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার কর আমারে...। নিজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি বলে লোক শিক্ষার প্রতি হরিনাথের বিশেষ আগ্রহ ছিল।  কলকতার বাইরে দূরে মফস্বলে সংসৃ্কতিচর্চার একটি অনুূূকূল আবহাওয়া রচনা করতে পেরেছিলেন  তিনি। কিন'  উপার্জনের নির্দিষ্ট উৎস না থাকায় আর গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা প্রকাশের জন্য চরম ঋণগ্রস- হয়ে পড়ায় আক্ষরিক অর্থেই তিনি প্রায় কাঙাল হয়ে পড়েন। তারপরও কৃষক-প্রজা, রায়ত শ্রমজীবী মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর স্বার্থের অনুকূলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক হিসাবে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২৫ বছর  চলেছিল। তখনো  তিনি তার প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। এলাকার সুধীজনদের অভিমত, আমাদেও দেশে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিউট বা সাংবাদিকতা বিভাগে রয়েছে- এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে কি কাঙাল হরিনাথের এ প্রেসটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারে না? ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে কাঙাল হরিনাথ পরিষদের পক্ষ থেকে এর সভাপতি কামাল লোহিনী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী এ ধরনের উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলেন। কিন' দুঃখজনকভাবে কাঙালের বংশধরদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাননি তারা। হরিনাথ মজুমদারের প্রপৌত্র অশোক মজুমদারকে জিজ্ঞাসা করা হয়, জাদুঘর বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসটি সংরক্ষণের ব্যবস'া নেয়া হলে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা। তখন তিনি জবাব দেন আমার বেনিফিট কোথায়? স'ানীয় জনসাধারণসহ সবার অভিমত, কাঙাল হরিনাথের এ প্রেস একটি জাতীয় ঐতিহ্য। জমি সংক্রান- বিরোধের কারণে এ সম্পদটি ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। সে কারণেই রাষ্ট্রীয়ভাবে এর সংরক্ষণ হওয়া উচিত।

                                                      ছবিঃ  কাঙাল হরিনাথ ও ছাপাখানা

টেগর লজ:
কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবসি'ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টেগর অ্যান্ড কোম্পানীর এ দেশীয় শাখা অফিস টেগর লজ। কবিগুরু কলকাতা থেকে শিলাইদহে আসার পথে এই টেগর লজে বিশ্রাম নিতেন। বাড়িটি শহরের মিলপাড়ায়। জায়গা খুব বেশি নয়, সাকল্যে নয় কাঠা। তার ওপরে ছোট্ট দোতলা বাড়ি। পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। উত্তর-দক্ষিণ দুই পাশেই বারান্দা। পশ্চিম পাশের কুঠুরির কোণে দোতলায় ওঠার প্যাঁচানো লোহার সিঁড়ি। বাড়িতে প্রবেশের পথ অবশ্য উত্তর দিকে। একেবারে মিলপাড়ার সড়কের সঙ্গে লাগোয়া। বাড়িটির নাম ‘টেগর লজ’। ছোট্ট বাড়িটি মাপে ছোট হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য হওয়ার কারণে মর্যাদা ও গৌরবে এক বিশালতা জুড়ে থাকলেও কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ির যেমন বিপুল খ্যাতি ও পরিচিতি, সে তুলনায় শহরের ভেতরের এই বাড়িটি এখনও  প্রায় অপরিচিতই বলা যায়।
ভুসিমালের কারবারের সঙ্গে এখানে কবি আখ মাড়াইকল ও পাটের গাঁট তৈরির কলও স'াপন করেছিলেন। পরে স্বদেশী আন্দোলনের চেতনায় টেগর লজকে কেন্দ্র করে একটি বড় তাঁতশালাও গড়ে তোলেন। কবিকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করতেন তাঁর দুই ভ্রাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথমটায় ব্যবসা ভালো চললেও পরে টেগর অ্যান্ড কোম্পানি ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকে। পাটের কারবার করতে এসে কবি লাখ টাকার ওপরে ঋণগ্রস- হয়ে পড়েন। উপায়ান-র না দেখে তিনি শ্বশুরবাড়ি খুলনার দক্ষিণডিহির উদ্যমী যুবক যজ্ঞেশ্বরকে ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব দেন। যজ্ঞেশ্বর বহু খেটেখুটে ডুবতে বসা টেগর অ্যান্ড কোম্পানিকে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে কবি তিন হাজার টাকায় যজ্ঞেশ্বরকে কোম্পানির সমুদয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল দান করে দেন এবং টেগর লজসহ এখানকার দুই বিঘা জমি বছরে ৫০ টাকা খাজনার বিনিময়ে বন্দোবস- করে দেন। পরে যজ্ঞেশ্বর এখানে ‘যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’ নামে একটি কারখানা গড়ে তোলেন (কারখানা ভবনটি এখনো আছে)। তারপর তো কেটে গেছে বহু দিন। একপর্যায়ে টেগর লজ বেদখল হয়ে যায়। বহু হাত বদল হয়ে অবশেষে এর মালিকানা এসে পৌঁছায় স্থানীয় আবদুল গফুরের স্ত্রী ছালিমা খাতুনের নামে।  আশপাশের জমিও চলে গেছে বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে। তাঁরা নিজেদের নামে কাগজপত্র করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বাড়িটি আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ২০০৪ সালে পৌরসভার পক্ষে পাঁচ লাখ টাকায় বাড়িটি কিনে নেয়া হয়। নিচের তলায় একটি বড় হলঘর ও একটি ছোট ঘর। ওপরে ঘর তিনটি। ওপরের তলায় মাঝের ঘরটি বড়। এখানে একটি আলমারিতে রাখা আছে কবির রচিত গ্রন'মালা। দেয়ালে ঝোলানো কবির আঁকা ১২টি ছবির অনুকৃতি। দক্ষিণে সবুজ ঘাসে ঢাকা একচিলতে আঙিনা। সেখানে ছোট্ট একটি মঞ্চও আছে। উত্তরের প্রবেশপথের সামনেই কবির আবক্ষ মূর্তি। এই মূর্তি ও ছবির অনুকৃতিগুলো ভারতীয় দূতাবাস দান করেছে বলে জানালেন টেগর লজের তত্ত্বাবধায়ক এস এম নূরুদ্দিন। ওপরতলায় আসবাবের মধ্যে আছে কয়েকটি চেয়ার ও হেলান দিয়ে বসার একটি লম্বা বেঞ্চ। এগুলো শিলাইদহের আসবাবের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। জরাজীর্ণ দেয়াল ছাড়া আর কিছুই ছিল না বাড়িটিতে। কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বললেন, ‘শিলাইদহের কুঠিবাড়ি সুপরিচিত হলেও টেগর লজকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের সঙ্গে কবির যে সম্পর্ক, তা অনেকেরই অজানা। ফলে টেগর লজ আজও উপেক্ষিত। টেগর লজকে অনতিবিলম্বে রবীন্দ্র জাদুঘর ও সংগ্রহশালায় পরিণত করতে তিনি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রলালয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী ভবনটিকে ঘিরে কুষ্টিয়ার সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
                                                     ছবি: টেগর লজ




মোহিনী মিলস:

 লাল টকটকে দ্বিতল টেগর লজ এই ভবনটির পেছনেই রয়েছে অবিভক্ত বাংলার প্রথম ও প্রধান বস্ত্রকল ‘মোহিনী মিলস’। সমপ্রতি চালু হওয়া এই মোহিনী মিলও আপনি ঘুরে দেখতে পারেন। কথিত আছে, মোহিনী মিলের হুইসেলের শব্দ শুনে এলাকাবাসী তাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম শুরু করতেন। ভারতের প্রখ্যাত সুতা ব্যবসায়ী মোহিনী মোহন চক্রবর্তী ব্যবসার কাজে বেশ কয়েকবার কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন। নদীপথে নিরাপদ যাতায়াত আর উন্নত রেল যোগাযোগের কারণে তিনি কুষ্টিয়ার বড় স্টেশন সংলগ্ন জায়গায় একটি সুতা মিল স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরে ১৯০৮ সালে মিলপাড়া এলাকায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করেন মোহিনী মিল। সে সময় সুদূর ইংল্যান্ড থেকে পিতলের হ্যান্ডলুম মেশিন আর পিতলের তৈরি প্রায় ২০০ তাঁত আমদানি করে বসিয়েছিলেন মোহিনী মিলে। এ সময় ভারতবর্ষের কয়েকটি জায়গায় এ ধরনের আধুনিক সুতার কল ছিল। এর মধ্যে মোহিনী মিল ছিল অন্যতম। এখানে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করতেন। এ মিলে উৎপাদিত সুতা ভারতবর্ষের সব প্রদেশ ছাড়াও বার্মা, পাকিস্থানি ও শ্রীলংকায় যেতো।
সে সময় প্রতিদিন কুষ্টিয়া বড় স্টেশনে ভারতের শিয়ালদহ থেকে কয়েকটি বগি রিজার্ভ আসতো মোহিনী মিলের সুতা নেয়ার জন্য। আবার বড়বাজার গড়াই নদীর ঘাট থেকে বড় বড় নৌকায় সুতা যেতো দেশের বিভিন্ন জায়গায়। পাবনা, শাহজাদপুর, গাজীপুর, নাটোরসহ দেশের প্রায় সব এলাকা থেকে তাঁতিরা এখানে আসতেন সুতা কিনতে। মোহিনী মিলের এ গোল্ডেন যুগ একটানা ১৯৬৫ সাল পর্যন- চলে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্থানিরা এ দেশে হিন্দু সম্পত্তির ওপর একটু বাঁকা নজর ফেলতে থাকে। ’৬৫ সালের শেষের দিকে মোহিনী মিলের মালিক মোহিনী মোহন চক্রবর্তীর ওপর নেমে আসে সামপ্রদায়িক থাবা। রাতের আঁধারে মিলের ভেতর প্রবেশ করে লুটপাট চালিয়ে মালিক পক্ষকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় পাকিস্থানি দোসররা। একদিন প্রাণভয়ে রাতের আঁধারে শুধু স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে মিলের মৌখিক মালিকানা স্বত্বের বিনিময়ে সব কিছু ছেড়ে এ দেশ ছাড়তে হয় মোহিনী বাবুকে। এর পরে পাকিস্থানি দোসরদের ইশারায় মিলের এমডি কানু বাবু মোহিনী মিলের সর্বময় কর্তা বনে যান। এর মধ্যে চলে আসে বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধ। স্বাধীনতাযুদ্ধে কানু বাবুরা এ দেশ ছেড়ে চলে যান। মালিকানাহীন মিলটি পড়ে থাকে বেশ কয়েক বছর।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৭নং আদেশ বলে মিলটি জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্প করপোরেশনের পরিচালনায় ন্যস- করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি কিছুদিন চালু থাকার পর আবার বন্ধ হয়ে যায়। অত্যধিক লোকসানজনিত কারণে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চালানোর অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ১৯৮১ সালের ১২ জুনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মিলটি গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান- নেয়া হয়। ১৯৮২ সালের ৫ ফেব্রয়ারি মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে মিলটির সথাবর/অস'াবর সম্পত্তি বিক্রি করে দায়-দেনা মেটানোর জন্য একজন লিকুইডেটর নিয়োগ দেয়া হয়। মিলটির স্থাবর/অস্থবর সম্পত্তি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দরদাতা নজরুল ইসলামের কাছে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকায় এক বিক্রয় চুক্তিমূলে ১৯৮৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর হস্থান্তর করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২০ জানুয়ারি এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তিমূলে গুটানো মোহিনী মিলের হস্থান্তরিত্ব সম্পত্তির ক্রেতা নজরুল ইসলামের স'লে মেসার্স শাহ মখদুম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নামে গ্রহণ করা হয় এবং ওই কোম্পানি নজরুল ইসলামের স'লাভিষিক্ত হয়। ক্রেতা কোম্পানি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি বন্ধক রেখে এবং গুটানো মোহিনী মিলের সম্পত্তির ওপর ২য় চার্জ সৃষ্টি করে অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া বড়বাজার শাখা হতে প্রায় ৭ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। কিন' মিলের পুরনো অংশটি পুনরায় চালু করার শর্তজুড়ে দেয়ার কারণে কাঙ্খিত ও গুণগত উৎপাদন না হওয়ার ফলে মালিকপক্ষকে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়। এ লোকসানের কারণে ১৯৮৮ সালের ২৫ মে মিলটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে কুষ্টিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী মোহিনী মিলটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন মোহিনী মিলসহ সব বন্ধ মিল পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রতি বাস-বায়নের লক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় এককালীন কুষ্টিয়াবাসীর গৌরব মোহিনী মিল পুনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

                                                         ছবিঃ মোহিনী মিলস

ডঃ রাধা বিনোদ পালঃ
ড. রাধাবিনোদ পাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ী মিত্রশক্তির বিপক্ষে এবং জাপানিদের পক্ষে যুগান-কারী রায় দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করায় বাংলাদেশী হিসেবে তাঁকে নিয়ে প্রচণ্ড অহঙ্কার ও গর্ববোধ করা হলেও কুষ্টিয়ার মিরপুর কাকিলাদহ আজও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে তার বাস'ভিটা। ইতোমধ্যে কাকিলাদহের ১৫০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত পৈত্রিক ভিটার ১২০ বিঘা জমি আজ জাল দলিলে হস-ান-রিত। দীর্ঘ ১০০ বছর আগের কিছু স্মৃতি, কিছু চিহ্ন তার বাস'ভিটায় আজ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুস্কর। স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সরকার ড. রাধাবিনোদ পালের বাস'ভিটায় সরকারী উদ্যোগে অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরী ও মিউজিয়াম নির্মাণের প্রকল্প বাস-বায়নের কথা বললেও কোনো প্রকল্প আজও বাসত্মবায়ন হয়নি। ফলে এতদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চরম অনাদর আর অবহেলায় পড়ে থাকা তাঁর বাস'ভিটা- যার সবকিছুই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এলাকাবাসী মনে করেন, বিভিন্ন সরকারের সময়ে নেয়া প্রকল্পগুলো এখন বাস-বায়ন হলে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজেই ড. রাধাবিনোদ পালের  জীবনকর্ম ও সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে ।।







1 comment :

  1. লালন শাহ এর মাজার থেকে কালীগঙ্গা নদীতে কিভাবে যেতে হয় ?

    ReplyDelete